अनुपम हाजरा

28/09/2020,4:33:49 PM.

সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’-য় মন্দার বোসের চরিত্র বলেছিল, ‘‘হাজার হাজার ডক্টর হাজরা!’’ বিজেপি-র অন্দরে অবশ্য এখন একজন ‘ডক্টর হাজরা’ নিয়েই যাবতীয় জল্পনা। অনুপম হাজরা। যাঁকে সদ্য দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হল। কে এই হাজরা? কেন তিনি দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে? জবাব খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি-জনতা। ব্যস্ত বিজেপি। ব্যস্ত সঙ্ঘ পরিবারও।

দলের নেতাদের একাংশের মতে, জনভিত্তির নিরিখে অনুপম পিছিয়ে ঠিকই। কিন্তু তিনি বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করতেন। এমন উচ্চশিক্ষিত তফসিলি মুখ রাজনীতিতে সহজলভ্য নয়। তাঁর গায়ে রয়েছে শহুরে মধ্যবিত্তের ছাপ। উপরন্তু তিনি তৃণমূল থেকে এসেছেন। ফলে তাঁকে কেন্দ্রীয় স্তরে সম্মানজনক পদ দিয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে আগত অন্যান্য ‘নবাহূত’-দের কাছেও বার্তা পৌঁছে দেওয়া গেল। অনুপমের অন্তর্ভূক্তির কারণেই তাঁকে বাদ পড়তে হয়েছে বলে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাহুল সিংহ। তবে বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য, রাহুলকে সরতেই হত। তাঁর কাজকর্মে দিল্লি তেমন খুশি ছিল না।

যেমন তারা খুশি ছিল না রাম মাধবের কার্যকলাপ নিয়েও। সঙ্ঘ এবং বিজেপি-র মাঝের সেতুর অন্যতম স্তম্ভ বলে মাধবকে মনে করা হত। তবে সঙ্ঘ, দল বা সরকার— বেশ কিছুদিন ধরে কারও সঙ্গেই মাধবের নীতি বা কর্মপন্থা পুরোপুরি মিলছিল না। তিনি নিজেকে ‘সমান্তরাল প্রতিষ্ঠান’ বলে মনে করতে শুরু করেছিলেন বলে সঙ্ঘ এবং বিজেপি-র একাধিক সূত্রের বক্তব্য। তাঁর ‘প্রচারক’ পদ আগেই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সঙ্ঘ। অমিত শাহের রেখে যাওয়া কমিটিতে তবু তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা কোনও দ্বিধা না দেখিয়ে তাঁকে ছেঁটে ফেলেছেন। দিল্লির খবর, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বিজেপি-র বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজয় চৌথাইওয়াল অভিযোগ করেছিলেন মাধব সম্পর্কে। প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্ক স্থাপনের শাখা ‘ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অব বিজেপি’ কাজ করে বিজয়ের নেতৃত্বে। বিদেশনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে ‘অত্যুৎসাহী’ মাধবের নানা কার্যকলাপে বিজয়ের সঙ্গে তাঁর মতান্তর ঘটছিল। দলের বিদেশনীতিতে নাক গলিয়েই মাধব থেমে থাকেননি। ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামে যে থিঙ্কট্যাঙ্কের বোর্ড অব গভর্নর্সে রয়েছেন মাধব, সেই সংস্থার হয়ে বিদেশ দফতরের আমলাদের তিনি সরাসরি ফোন করছিলেন এবং নানা নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এতে অসন্তুষ্ট বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর মাধবের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে অনুপমকে নেওয়ার ক্ষেত্রে নড্ডা নানা ভারসাম্য বজায় রেখেছেন, তেমনই প্রাক্তন সভাপতি অমিতের সব লোকজনকে তিনি বাদ দিয়ে দিয়েছেন, এমনও বলা যাচ্ছে না। বস্তুত, সেই রদবদলে নড্ডা একহাতে তুলেছেন। অন্যহাতে ফেলেছেন। মধুকর রাওকে নড্ডা সংগঠনের অন্দরে ‘বিপদ’ হিসেবে মনে করতেন। তাঁকে তিনি ছেঁটে ফেলেছেন। সেই পদে নিয়ে এসেছেন ‘অমিত-ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ভূপেন্দ্র যাদবকে। আবার ‘অমিত-ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত পীযূষ গয়াল, ধর্মেন্দ্র প্রধানদের ছেঁটে ফেলেছেন। তাঁদের মৌরসিপাট্টা গড়ে উঠতে দিতে চাননি। পাশাপাশিই কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেননদের স্বমহিমায় রেখে দিয়েছেন। যাঁদের উত্থান অমিত-জমানাতেই।

তবু এসব পেরিয়ে জল্পনা, প্রশ্ন এবং চর্চা সেই ডক্টর হাজরাকে নিয়েই। রাজ্য বিজেপি-র একাংশের দাবি, অনুপমের নাম নড্ডার কাছে পৌঁছেছে শিবপ্রকাশের (বিজেপি-র সর্বভারতীয় যুগ্ম সংগঠন সম্পাদক) তরফে। অনুপম দীর্ঘদিন ধরেই শিবপ্রকাশের ঘনিষ্ঠ। আবার অনুপমের অন্তর্ভুক্তির পিছনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা উত্তরাখণ্ডের তফসিলি আসন আলমোড়ার সাংসদ অজয় টামটার ভূমিকার কথাও শোনা যাচ্ছে। তফসিলি নেতা হিসেবে টামটার সঙ্গেও অনুপমের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। অনুপম নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘বিজেপি-তে আমার সবচেয়ে পুরনো আলাপ শিবপ্রকাশজির সঙ্গে। ২০১৬ সালে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ। উনি বরাবরই আমাকে স্নেহ করেন। পরে কৈলাসজির সঙ্গেও পরিচিত হই। তাঁর কাছ থেকেও বরাবর সন্তানস্নেহ পেয়ে এসেছি।’’

অনুপমকে নিয়ে জল্পনার পাশাপাশি রাহুল-প্রশ্নে অবশ্য রাজ্য বিজেপি-র নেতারা সাবধানী। অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘দলের সভাপতির পূর্ণ অধিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় পদাধিকারীমণ্ডলীর সদস্যদের বেছে নেওয়ার। তবে রাহুল সিন্হা সম্পাদক বা সভাপতি থাকুন বা না-থাকুন, উনি আমাদের নেতা ছিলেন, আছেন, থাকবেন।’’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *